শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রার্থী হাফডজন জনসম্পৃক্ততা কম

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২১  

# প্রার্থী জানেনা, ঘোষণা দেন আরেকজন 


# ব্যানার-ফ্যাস্টুনে অনেক খরচ, সেবার বেলায় নাই


# প্রথমে হিরো, পরে নাই; একজন চুপ, আরেকজনের ফেসবুকে ঘোষণা


মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল (ভিপি বাদল)। তবে ঘোষণাটি তিনি দেননি। দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান।  গত ১২ ফেব্রুয়ারি গোগনগের সেলিম ওসমানের এ ঘোষণার পর ক্ষুণাক্ষরেও এব্যাপারে টু শব্দটি করেননি ভিপি বাদল। আবার এর বিপরীতটিও রয়েছে।

 

হঠাৎ করে পুরো শহরে ব্যানার-ফ্যাস্টুনে ছেয়ে গেল। এসবের নিচে লেখা আমি অতিসাধারণ। দিন কয়েকপরে অতিসাধারণ ব্যক্তিটাই সংবাদ সম্মেলন করে গলা ফাটিয়ে ঘোষণা দিলেন তিনি আগামী নির্বাচনে মেয়র হয়ে জনসাধারণের সেবা করতে চান। অতিসাধারণ ব্যক্তিটি কামরুল ইসলাম বাবু। বছরের শুরু থেকে প্রথম ছয় মাসে অন্তত হাফ ডজন মানুষ মেয়র পদে প্রার্থীতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগেরই জনসম্পক্ততা নেই। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত  মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন এমন সংখ্যাটাও নেহাৎ কম। তবে সকলেই চান মেয়র হতে।

 


সূত্র জানিয়েছে, গতবছর করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই বুক চিতিয়ে করোনাকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। করোনায় স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ থেকে শুরু করে লাশদাফনে টিম খোরশেদ কী ভূমিকা রেখেছে তা আর নতুন করে বলতে হবেনা। যার ফলশ্রুতিতে খোরশেদ উপাধী পান বীর বাহাদূর খোরশেদ। ঠিক তখনি আলোচনায় আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে খোরশেদকে চান কেউ কেউ। তবে ঠিক সেই মুহুর্ত্বেই খোরশেদ যেন তলানীর ময়লাই উগলে দিলেন। এক নারীর সাথে স্ক্যান্ডাল ও বিয়ে সংক্রান্ত বিতর্কে খোরশেদ হয়ে পড়েন বেসামাল। এমনকি সেই নারীর আইসিটি এ্যাক্টের মামলায় খোরশেদ এখন পলাতক।

 

গত বছরের বীর বাহাদুর খোরশেদ এবার গতবারের চেয়ে খারাপ ভ্যারিয়েন্টের করোনায় মানুষের পাশে নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আসবেনা এমন আগাম কথাতেই যেন সতর্ক গতবারের নির্বাচনের বিএনপি প্রার্থী মহানগর বিএনপির সহসভাপতি এড.সাখাওয়াত হোসেন খান। গতবার করোনা দুর্বার আক্রমনের সময় মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়ালেও এবার যেন তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছেনা। আদালতঅঙ্গনে নীরবতা আর মহানগর বিএনপির স্থবিরতা যেন মাঠ থেকে নিজেই ছিঁটকে পড়ছেন সাখাওয়াত। সাখাওয়াত চুপসে গেছেন বুঝেই কিনা সরব হয়েছে অন্যান্য কয়েকবিএনপি নেতা।

 

একসময়ের জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও বর্তমান মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চান। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণই না করেন তবে যেখানে গতবারের বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত পিছিয়ে গেলেন সেখানে এড.টিপুর কেন এতো উচ্ছাস। অবশ্য উত্তরটি টিপুই দিয়েছেন, তিনি বলছেন, তিনি শুধু প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

 

সাখাওয়াত কিংবা টিপু দুজনের ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের ভাষ্য, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতেও তারা কেউই জনকল্যাণে এগিয়ে আসছেননা। জনগণের সেবক হতে গেলে সেবা করতে হয় সেই কথাটি আমলে না নিয়ে কীভাবে মেয়র হবেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন। এদিকে আওয়ামী লীগের জেলার সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদলকে মেয়র হিসেবে এমপি সেলিম ওসমান দেখতে চাইলেও তাতে নীরবতা কেন এই প্রশ্নের উত্তরও জানা সাধারণ মানুষের। যদি জেলা আওয়ামী লীগের বড় পদে আসীন ভিপি বাদল শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ কিংবা বন্দরে একজন মেয়রের যে ধরণের জনসম্পৃক্ততা থাকার কথা সেটি নেই ভিপি বাদলের। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগতভাবে চলমান কঠোর লকডাউনেও মানুষের কল্যাণে এখন নিবেদিতভাবে কাজ শুরু করতে পারেননি ভিপি বাদল।

 

এদিকে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র পদে নিজেকে ঘোষণা দেয়া অতিসাধারণ কামরুল ইসলাম বাবুও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। পোষ্টারে অতিসাধারণ দাবি করলেও অভিযোগ উঠেছে তার সাথে চলাফেরা করা লোকজন কেউই সাধারণ নন। এমনকি  বেশ কয়েকটি ছবিতে স্থানীয় যাদেরকেই দেখা গেছে তারা বেশ বিতর্কিত। এরপরেও এখনো সেই অতিসাধারণ ব্যক্তি এখনো করোনার লকডাউনে আটকে পড়া মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি।

 

অনেকে বলছেন, যে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন, তা দিয়ে হলেও মানুষকে সাহায্য করে নিজেকে সাধারণ বলে তিনি কিছুটা প্রমাণ করতে পারতেন। যে অর্থ তিনি পোষ্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে খরচ করেছেন তা দিয়ে অসহায় সাধারণ মানুষের অনেক উপকারই চাইলে তিনি করতে পারতেন। অবস্থা এমন যে মেয়র হতে চান, তবে জনগণের সেবা করতে চাননা। এদিকে দেবোত্তর সম্পত্তির আত্মসাত হচ্ছে এমন ধোঁয়াশা তুলে আলোচনায় এসেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। কিন্তু সেই আওয়াজ ধোঁপে টেকেনি। উল্টো এতে বিতর্কিত হয়েছেন খোকন সাহা।

 

বছরের বেশিরভাগ সময়ই বর্তমান মেয়রের সমালোচনায় কাতর থাকলেও মানুষের জন্য নিবেদিতভাবে খোকন সাহাকে দেখা গেছে কমই। উল্টো মেয়রকে বিতর্কিত করতে গিয়ে নিজেই বিতর্কিত হয়েছে ঢের। সম্প্রতি নিজের বাড়ির সামনে ক্ষণিকের জলাবদ্ধতায় ছবি তুলে দুর্ভোগ বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু উল্টো ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান তাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন। শফি অভিযোগ করে বলেন, সেখানে জলাবদ্ধতার কারণটি খোকনসাহা ভালো করেই জানেন আর তাই খোকন সাহার ওই জলাবদ্ধ পানিতেই দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ। যারাই মাঝেসাঝে আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে খোকন সাহার জন্য আওয়াজ তুলেছিলেন সেটিও এখন মিইয়ে গেছে। 

 

সূত্র জানিয়েছে, গত ছয়মাসে ফলাও করে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারে আসা ব্যক্তিদের কারোরই তেমন জনসম্পৃক্ততা নেই। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। পৌরসভা আমল থেকে শহরের মানুষের সেবা করা বর্তমান সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও আগামী নির্বাচনে প্রার্থীতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গত ২৭ জুন মেয়র এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আসছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন পেলে তিনি মানুষে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইবেন। আইভী বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি মনোনয়ন দিলে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ভোট চাইতে যাবেন।’

 

সূত্র আরো জানায়, মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কতখানি উন্নয়ন করেছেন সেই তথ্যাদি দেশ ছাপিয়ে বিদেশের মানুষও জানেন। সিটি এলাকার মানুষের কল্যাণে এবং তাদের জীবন-মান উন্নয়নে তিনি নিবেদিত এটা সবাই প্রমাণিত। গতবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সিটি করপোরেশন ও নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নিয়ে মেয়র আইভীর পদক্ষেপ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। গত ১৭ বছরে বর্তমান মেয়র আইভীর উপরই মানুষ সবচাইতে আস্থাশীল। গত ছয় মাসে যে কজন আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজেদের জানান দিয়েছেন, তার মধ্যে জনসম্পৃক্ততা খুব প্রগাঢ়ভাবে আছে এমন নামটি একমাত্র মেয়র আইভীরই। 


রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়র পদে প্রার্থীতা চাইবার অধিকার যে কোন দলের, যে কোন মতের মানুষেরই রয়েছে। তবে যিনি মেয়র হতে চান, তার প্রথম ইচ্ছাই হওয়া উচিৎ মানুষের জন্য নিজেকে নিবেদিত করা, মানুষের সেবা করা। তবে তিনি যদি মানুষের সেবাই না করতে চান, মানুষের পাশেই না দাঁড়াতে পারেন তবে মানুষ তাকে কেন পছন্দ করবে, ভোট দিবে। এখন পর্যন্ত বর্তমান মেয়রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোন প্রার্থী আসেনি, যার রয়েছে জনসমর্থন কিংবা তিনি ননস্টপ মানুষের সেবা করা। তবে যারাই মেয়র প্রার্থী কিংবা জনপ্রতিনিধি হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাদের উচিৎ এই মহামারীতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। মানুষের বিপদে সাহায্য করা।    

এই বিভাগের আরো খবর