শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্যর্থতা ঢাকতে গোপনীয়তায় মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২২  


# তসবি হাতে সভায় উপস্থিত হন শামীম ওসমান


# আইভী কেন এলেননা প্রশ্ন কেন্দ্রীয় নেতাদের


# রাজাকারের ছেলে আওয়ামীলীগ অফিসে এলো কীভাবে

 



জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভেদ-দ্বন্দ্ব-অনিয়মের অন্ত নেই। দুই কমিটি নিয়েই নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। আশার সঞ্চার হয়েছে সম্প্রতি চলতি মাসে জেলা ও  মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে। শনিবার জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা খোলামেলাভাবে ২নং রেলগেট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হলেও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এনিয়েও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, নিজেদের ব্যর্থতার কথা ঢাকতেই মহানগর আওয়ামী লীগ রোববার ২ অক্টোবর সকাল ১১ টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের রেষ্ট হাউজের ৪র্থ তলায় এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন।

 

 

 

 

 

 

 

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি ১ অক্টোবর জেলার পার্টি অফিসে বর্ধিত সভাতে উপস্থিত ছিলেন। বর্ধিত সভা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের কেউ বক্তব্য রাখেনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

সূত্র জানিয়েছে, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানিয়েছে, বর্ধিত সভায় দেরী করে আসেন এমপি শামীম ওসমান।  এসময় তার হাতে তসবী ছিল। বর্ধিত সভার শুরুতেই কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে কথা তোলেন। ওয়ার্ড কমিটিগুলো না হওয়ায় ১০টি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যারা প্রত্যেকেই নিজেদের পদ বলার সময় সাবেক কথাটি বলেন। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ  সম্পাদক এড. খোকন সাহাকে গত ৯ বছরেও কেন ওয়ার্ড কমিটিগুলো করতে পারেননি সে বিষয়ে ব্যর্থ বলেন। এছাড়া সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতারা  মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিটি নির্বাচনের আগের বিষয়টিও টেনে আনেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীর ভাই পরপর কীভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয় শামীম ভাই এর ব্যাখা আপনাকে দিতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নাসিক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী উপস্থিত থাকলেও ভালো হতো।

 

 

 

 

 

 

 

 

মেয়র কাজে ব্যস্ত থাকায় বর্ধিত সভায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে অবহিত করেন তারা।  তবে বর্ধিত সভায় শামীম ওসমানও বলেন, রাজাকার পুত্র কীভাবে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া তিনি মহানগর ও জেলার নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া সভায় আরেকটি বিষয়ও সামনে আসে গত সিটি নির্বাচনের আগের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেটি হচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির মৃধা মেয়র আইভীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করার পর নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারাও সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। একই সাথে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তারা দুইজনই উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

এমনকি হুমায়ুন কবির মৃধা বক্তব্য পর্যন্ত দেন। এনিয়েও কানাঘুষা হয় বর্ধিত সভায়। কেননা শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়  গোগনগর ইউপি পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আল মামুন এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে স্বাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তাকে বের করে দেয়া হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

তবে ঠিক কী কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই জন বহিষ্কৃত নেতা উপস্থিত হলেন সেটিও প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া বর্ধিত সভায় ২৫ অক্টোবর সম্মেলন করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এদিকে সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় প্রভাবশালী মন্ত্রী, মেয়র, এমপি ও নেতারা উপস্থিত থাকলেও একদিনের ব্যবধানে মহানগরের সভাটি হয় অভিজাত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলার সভা হলেও কার স্বার্থে মহানগরের সভাটি ক্লাবে হয়েছে তা নিয়ে সেটা প্রশ্ন উঠেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে অনেকে তা বুঝতে পারলেও এবিষয়ে কেউ মুখ খুলেন নাই। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান, শাহ নিজাম, আহসান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, মাহমুদা মালা, জাকিরুল আলম হেলালসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে যেখানে সভা করতে পেরেছে সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগ কেন সভা করতে পারবে না তা নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা কেন-ই বা দলীয় কার্যালয় ছাড়া করতে হচ্ছে তাদের অজানা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 


তবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানান, বর্ধিত সভায় মহানগরের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবং আগমা ২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কোথায় হবে তা নির্ধারণ করা হয় নাই। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটি গঠনের পর একের পর এক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের আর ওয়ার্ড পর্যায়ে সফলতা আসেনি। সেই সাথে নতুন কোনো কমিটিও আর আসেনি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেই প্রায় ৯ বছর আগের করা মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। আর এই দীর্ঘ সময়েও মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মাঝে মাঝে কমিটি গঠন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা আর সফলতার মুখ দেখে না তৃণমূল নেতা কর্মীরা।

 

 

 

 

 

 

 

 

বারবার আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে এবার জমকালোভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে।মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব জানান, বর্ধিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সম্মেলনকে সফল ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা দিক নির্দেশনা দেন।    এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর