বুধবার   ০১ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

এবার সংগঠন মেরামতের পালা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৪  

 

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের বছর খানেক আগে থেকেই থমকে আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে সীমাবদ্ধ হওয়ার দরুণ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির আন্তঃকোন্দলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা স্থবির বলা চলে।

 

কখনো কমিটি প্রদান, কখনো কোন্দল আবার কখনোবা স্বেচ্ছাচারিতার কারণ বশত রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হলেও সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে।পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর এবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা চাইছেন অনতিবিলম্বে যাতে  সাংগঠনিক যে সকল বিষয়ে গ্যাপ রয়েছে তা যেন মেরামতের দিকে নজর দেয়া হয়। 

 

সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে খোদ জেলার সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে সম্মেলিত ভাবে নয় এই দুই নেতার পছন্দের লবি উত্তর-দক্ষিণ বলয়ের নেতাদের নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বিভিন্ন সভায় আলোচনা করছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল এবং জেলার নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দারস্থ হয়ে কমিটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য তাগিদ দেয়ার জন্য আহ্বান জানান।

 

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে দেখা করেন। সে সময় জেলার সভাপতির হাতে একটি কাগজ দেখা যায় জেলার নেতাদের ধারণা জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েই তিনি আলোচনা করছেন। যার কারণে জেলার নেতার দাবি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে উঠে পড়ে লেগেছেন হাই-বাদল।

দলীয় সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সম্মেলনের দীর্ঘ পাঁচ মাস পর ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেন। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল দীর্ঘ ছয় মাস পর ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটি পৃথক কমিটির জমা দেন। তাদের পৃথক পৃথক কমিটির জমা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

 

পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে সমন্বয় করে কমিটি দেয়ার জন্য। তবে সমন্বয় করে কমিটি জমা হয়েছে কিনা সেটা খোলাশা না হলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া আছে কেন্দ্রে যেকোন সময় কমিটির অনুমোদন দিতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের পৃথক পৃথক ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়ে দায় এড়ালেও এখনো সে কমিটি অনুমোদিত না হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে।

 

যার কারণে সাম্প্রতিককালে কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধারণ ভিপি বাদল নানা রকম মন্তব্য করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেছেন, মদনপুরের কমিটি নেই গোগনগরে কমিটি নেই আমার থাইকা লাভটা কী? হাই সাহেবের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেন আমি দিয়ে দিব।

 

সর্বশেষ ২০ মার্চ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গণভবনে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তবে এক সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দুইজনের সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ পেলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেছেন এই সাক্ষাৎকার ব্যক্তিগত। গুঞ্জন রয়েছে যে কোন সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা করা হবে।

 

এই গুঞ্জনের মধ্যে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও আব্দুল হাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কমিটি নিয়ে তৎপরতার কারণে নেতাকর্মীরা দাবি করছে, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার স্বার্থে এবার টনক নড়েছে জেলা আওয়ামী লীগের।  

 

অপরদিকে একদিকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে প্রকাশের ক্ষেত্রে সময় সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে। অপরদিকে পাল্টা কমিটি প্রস্তুত করে প্রকাশের নির্দেশনায় রয়েছে। ঠিক এমনটিই চলমান রয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ইতিমধ্যেই তাদের দ্বারা মাধ্যমে গঠিত ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি ওয়ার্ডের নেতাদের দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন যেকোন সময়ই প্রকাশ করতে পারেন।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে এক প্রকার বিদ্রোহ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জি এম আরাফাত এবং ১৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগর পাল্টা কমিটি করার প্রস্তুতি রেখেছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দারস্থ হয়ে অভিযোগ দায়ের করার পর কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বস্ত করলে তারা পাল্টা কমিটি থেকে বিরত থেকেছেন।

 

কিন্তু বিদ্রোহ করা নেতাদের প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা থেকে বিরত থাকবেন। মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মোতাবেক ১৭টি ওয়ার্ডে গঠিত কমিটির নেতারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ইতিমধ্যেই তাদের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে এমতাবস্থায় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এই ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে শুরু হওয়া লড়াইয়ে জিতবে কারা?

 

সূত্র বলছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি প্রকাশিত হয়। কমিটি প্রকাশের পর ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কঠোর নির্দেশনা ছিল ১০দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হলে কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। সেই আলোকে ওয়ার্ডের নেতৃত্বে থাকা নেতারা ইতিমধ্যেই ১৭টি ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার নিকট প্রেরণ করেছেন। আর সেই কমিটি মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে। আর যেকোন সময়ই প্রকাশিত হতে পারে ১৭টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি প্রকাশের পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা মহানগরের কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা ডেকে সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরকে অব্যাহতি দেয়া হয় যেটা গত ২১ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত করেন মহানগরের দপ্তর  সম্পাদক।

 

পরবর্তীতে পাল্টা প্রতিবাদ করে বিদ্রোহ করার ইঙ্গিত দেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগর ও মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত। কিন্তু পরবর্তীতে ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশ দেন। আর সেই নালিশ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযমের কাছে প্রেরণ করেন পরবর্তীতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছায় নালিশ এমনকি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাতে পারে সেই নালিশ।

 

তবে এই নালিশকে কোন রকম মাথা ব্যথা হিসেবে না দেখে ১০দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনাকে প্রধান্য দিয়ে ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ করে জমা রেখেছেন মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। আর সেই কমিটিগুলো যেকোন প্রকাশ করতে পারেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এমনকি কমিটিগুলো এমন সময়ই প্রকাশিত করতে চান যেসময় কমিটিগুলো নিয়ে কোন রকম সমালোচনা করে সুবিধা করতে না পারে বিদ্রোহীরা।

 

এদিকে বিদ্রোহ করা নেতারা প্রস্তুত রয়েছেন কমিটি দিলেই পাল্টা কমিটি প্রকাশ করার। এমতাবস্থায় কমিটি নিয়ে পাল্টা পাল্টি লড়াইয়ের অবস্থান থেকে জিতবেন কারা সেটাই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।  

 

এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাইছেন, কমিটি নিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যে ধরণের স্থবিরতা ও কোন্দল তৈরি হয়েছে তা নিরসনে কেন্দ্র যদি এই মুহূর্তে হস্তক্ষেপ না করে তবে সামনের দিনগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে সাংগঠনিক তৎপরতা গতিশীল করার স্বার্থে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে বড় ধরণের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর