মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

জিয়ার ম্যুরাল এখন তামাশার বস্তু!

ইউসুফ আলী এটম

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২৪  

 

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল এখন নারায়ণগঞ্জের অনেকের হাসি তামাশার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা নগরীর চাষাঢ়াস্থ জিয়া হলের সম্মুখভাগে ছাদে দু’টি শক্ত পিলারে গাঁথা জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি গত ৪ এপ্রিল কে বা কারা ভেঙ্গে নিচে ফেলে দেয়। রাতের আঁধারে আচমকা ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে যান নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

 

কিন্তু মাঠে নামার সাংগঠনিক শক্তি না থাকায় তারা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটামের হুংকার দিয়ে শিয়ালের গর্তে ঢুকে পড়ে। ফটোসেশানেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের প্রতিবাদ। কেন্দ্রীয় নেতারাও পত্রিকায় বিবৃতি পাঠিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। তাদের নেতার এতো বড় অপমান তারা নীরবেই হজম করতে থাকেন। জিয়ার ম্যুরাল ভাঙ্গা নিয়ে কোন বড় ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ না করায় মনে হচ্ছে, তারা এ ধরনের ঘটনার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলেন।

 

আর এ সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন, ‘জিয়ার ম্যুরাল রাখার যোগ্যস্থান টাউন হল নয়। তিনি দেশের অবৈধ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার গোটা শাসনকালও ছিলো অবৈধ। এই অবৈধ শাসকের ম্যুরাল নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ঠাঁই হতে পারে না। তবে জিয়াউর রহমানকে যদি কেউ এতোই পছন্দ করেন, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার বাড়ির ট্যাংকির ওপর তার ম্যুরাল রাখতে পারেন। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। জিয়া হলের জায়গায় এখন ৬ দফা মঞ্চ হবে, এটাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।’ 

 

প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান টাউন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে অডিটরিয়াম নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ কেন। কিন্তু এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পূর্বেই জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট এমএ সাত্তার জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে টাউন হলের নাম পরিবর্তন করে জিয়া হল রাখেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জিয়া হলের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন নামকরণ করে।

 

২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এসে হলটির নাম পরিবর্তন করে আবার জিয়া হল রাখা হয় এবং হলের সামনে জিয়াউর রহমানের একটা ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। এভাবেই নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জিয়া হলের অস্তিত্ব নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান ঘোষণা দেন, জিয়া হলের নাম পরিবর্তন করে টাউন হল করা হবে। আর শীঘ্রই এটি ভেঙ্গে অডিটরিয়াম নির্মাণ করা হবে।

 

উক্ত সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমানও উপস্থিত ছিলেন। আর এবার জাতীয় সংসদে বক্তৃতাকালে সাংসদ শামীম ওসমান জিয়া হলের জায়গায় ৬ দফা মঞ্চ করার প্রস্তাব রাখেন। তার প্রস্তাবটিই এখন বাস্তবায়নের পথে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শামীম ওসমানের প্রস্তাব বাস্তবায়নে নেপথ্যে জোরালো ভূমিকা রাখছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এখানে ৬ দফা মঞ্চ হবে এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুষবে আর দেখবে। আসছে ১৫ আগস্ট জিয়া হলের জায়গায় ৬ দফা মঞ্চ উদ্বোধনও করা হবে। এস.এ/জেসি    

এই বিভাগের আরো খবর