মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

পছন্দ-অপছন্দের নির্বাচনী লড়াই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৪  

 

ঈদুল ফিতরের বন্ধের মধ্যেও থেমে ছিল না নির্বাচনী কুশলাদী বিনিময়। বিশেষ করে ৮ মে সম্ভাব্য সদর ও বন্দর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মী তো বটেই নির্বাচনী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এই দুই এলাকার নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে নির্বাচনের আগেই। প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দুই ভাই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে অন্যান্য প্রার্থীদের কোনঠাসা করার ঘোষণা দেন।

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় সদর উপজেলায় গত ১৫ বছরের অধিক মামলা জটিলতায় উপজেলা নির্বাচন আটকে আছে। এখানে বিএনপি নেতা আজাদ বিশ্বাস মামলা দায়েরের সুবিধা নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট এককভাবে উপজেলা চেয়াম্যান হিসেবে রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা নাজিমউদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনিরও নির্বাচন না হওয়ার দরুণ অপছন্দের তালিকায় থেকেও ক্ষমতায় রয়েছেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠভাজন শাহ নিজাম নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক।

 

অপরদিকে চেয়ারম্যান পদে মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও এমপি সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত শাহাদাত হোসেন সাজনুও নির্বাচন করতে চান। দুই জনই দুই এমপির ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগ নেতা মীর সোহেল ও শরিফুল হকও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন আরো অন্তত একডজন নেতা এই নির্বাচনে সদর উপজেলায় অংশগ্রহণ করতে চান।

এ নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব ও আভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা প্রকাশ্যে আসছে। নেতাকর্মীদের বিভেদ ঠেকাতে শামীম ওসমান তার কথার বাইরে গেলে তার সাথে সম্পর্ক না রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি মামলা জটিলতার দিকে আটকে থাকার প্রতি ইঙ্গিত করে নির্বাচন না হওয়ারও আভাস দিয়েছেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ওসমান পরিবারেই যে পছন্দ-অপছন্দের লড়াই শুরু হয়ে গেছে তাও এখন প্রকাশ্যে। যদিও এই সদর উপজেলায় আরেক আওয়ামী লীগ নেতা নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা তা নিয়েও ধুম্রজাল রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ মজিবুর রহমান ও ইয়াছিন মিয়াও সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। 

 

অপরদিকে বন্দর উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আরো ত্রাহী অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে সেলিম ওসমান এমপি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা সানাউল্লাহ সানুকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান নির্বাচনে চেয়ারমান পদে অংশ নিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।  

 

সেলিম ওসমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হতে গিয়ে পদ খুঁইয়েছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি সাবেক সাংসদ আবুল কালামের ভাই। বন্দর উপজেলায় মুকুলের ব্যাপক গণসমর্থন আছে। মাকসুদ চেয়ারম্যান ও আতাউর রহমান মুকুল এতোদিন সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হলেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সেলিম ওসমানের সিদ্ধান্ত তারা দুজনের একজনও মেনে নিতে পারেননি। শুধু তাই নয় তারা প্রত্যেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

 

সূত্র জানিয়েছে, সেলিম ওসমানের পাত্তা না পেয়ে মাকসুদ হোসেন শামীম ওসমানের দ্বারস্ত হয়েছেন। সেখান থেকে সিগন্যাল পেয়েই নির্বাচনে নেমেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। তবে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সুফিয়ান ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছিলেন। তবে সে যাত্রায় তিনি নির্বাচন না করলেও পরবর্তীতে উপজেলায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন। শেষ পর্যন্ত এমএ রশিদ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

সুফিয়ান ছাড়া এই বন্দর উপজেলায় আরো ৫ থেকে ৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করতে কেন্দ্র থেকে কড়া নির্দেশ থাকলেও সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান দুইজনের কেউই এসবের ধার ধারেননি। তাই এই দুই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাঁছাইয়ে তাদের দুইজনের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি বড় করে সামনে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রার্থী বাঁছাইয়ে তাদের এই প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত কার প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর